শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে পঠন পাঠন শালডাবরা জুনিয়র হাইস্কুলে

দীনেশ চন্দ্র কুইরী, পুরুলিয়া:- পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের দু নম্বর চক্রের তুন্তুরী সুইসা অঞ্চলের ঝাড়খন্ড লাগুয়া  প্রত্যন্ত গ্রাম শালডাবরা।
যেখানে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়র হাই স্কুল একি সাথে।

সোমবার দুপুর দুটোয় এমনি চিত্র ধরা পড়ল আমাদের ক্যামেরায়।
যা শুনলে হবাক হয়ে যাবেন।স্কুলের বাহিরে শুধু খেলা ধুলা ছাড়া আর কিছু নাই।

শালডাবরা জুনিয়র হাই স্কুলে সকাল দশটা থেকে দুপুর দুটো নাগাদ পর্যন্ত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে চলছে পঠন-পাঠন।যা আজকের নয় এই বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে বলে দাবি একাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের।

পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর একাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা তথা সবীতা গোপ, বৃহস্পতি গোপ, সুজিতা গোপ,রবি গোপ,বিলাসী গোপ এরা জানান,আমরা প্রতিদিন বাড়িতে খাবার খেয়ে সকাল দশটায় স্কুলে আসি।কিন্তু,প্রতিদিন স্কুলের শিক্ষক দুপুর বারোটায় আসেন।সেই সময় আমাদের প্রার্থনা হয়।আজকে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমরা স্কুলে আছি। মিড ডে মিলের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।

ওপর দিকে ওই স্কুলের রাধুনি শ্রীমতী গোপ ও লক্ষীমনি গোপ জানান,স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গত শনিবার আমদের মিড ডে মিলের রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম দিয়ে গেছেন। আমরা প্রতিদিন ১৩০ জন ছাত্র ছাত্রীদের রান্না করি।সেই মত আজকেও রান্না করেছি।কিন্তু আজকে দুজন শিক্ষক আসেনি।এই ঘটনা প্রায় দিনই হয়ে থাকে।আজকে অনুপস্থিত রয়েছেন কিন্তু প্রতিদিন উনারা দুপুর বারোটায়  আসেন বা আসেননি স্কুলে।এই ভাবেই চলছে স্কুলের পঠন-পাঠন।

ওপর দিকে ওই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তথা ভারতীয় জনতা পার্টির মণ্ডল ৩ এর সহ সভাপতি উপেন্দ্র নাথ গোপ জানান,এই বিষয়টি আজকের নয় প্রতিদিনই হয়ে থাকে।আজকে তো স্কুলের দুজন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু প্রায় দিনই দুপুর বারোটায় আসেন বা আসেননি।অনকে বার বলা সত্বেও এমনি ভাবে চলছে স্কুলের পঠন-পাঠন।
কারণ,এই শালডাবরা জুনিয়র হাই স্কুলের উপর নির্ভর করে বেশ কয়েকটি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা।যেমন শালডাবরা, বাঁশটার,বাঁধডি, গাগী, রাঙ্গামাটি, মুকরূপ, ডাংডুং, পেড়েতোরাং সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে মেয়েরা এই সরকারি স্কুলে পড়াশুনা করতে আসেন।কারণ,এই সব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল এছাড়া দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের ছেলে মেয়েরা আসেন শিক্ষা দানের জন্য।তাই সংবাদ মাধ্যমের প্রশাসনের কাছে করজোড়ে আবেদন জানান যাতে সঠিক তদন্ত করে শিক্ষাদানের ব্যাবস্থা করা হয়।

স্কুলের মেয়েকে ভর্তি করতে এসে ছাত্রীর অভিভাবক শিবেশ্বর কর্মকার ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে জানান,আমি আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য গত আট দিন ধরে আসছি এবং বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।স্কুলের শিক্ষক না থাকার কারণে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন,আমরা দিন আনা দিন খাওয়া লোক।মেয়েকে পড়াশুনার জন্য ভর্তি করতে এসে প্রায় দিনই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। শিক্ষকের অনুপস্থিতি থাকার কারণে।

অন্য দিকে স্কুলের শৌচালয়ের বেহাল অবস্থা রয়েছে।যা একেবারে ব্যবহারের অযোগ্য।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল মহাপাত্র কে ফোন জিজ্ঞাসাবাদ করলে উনি জানান,এই ঘটনা আজকের নতুন নয়,এই ঘটনাটি প্রায় দিনেই হয়ে থাকে।
কারণ,আজকে আমার এমার্জেন্সি থাকার কারণে আমি চলে এসছি ডাক্তার দেখানোর জন্য পুরুলিয়াতে।এই স্কুল চালানোর সমস্ত দায়িত্ব আমার নয়।তাই আমি রাধুনিদের কে বলে দিয়েছি তারা মিড ডে মিলের রান্না করে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের খাইয়ে বাড়ি চলে যাবেন।
এছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই।

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রাজেশ মণ্ডলকে ফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উনি জানান,আমি DI অফিস এসেছি স্কুলের কাজে। কারণ TIC পরিবর্তন হওয়ার জন্য। প্রাক্তন TIC আমাদের সেলারি করেননি।তাই সেলারির জন্য পুরুলিয়া DI অফিস এসেছি।আমি কিন্তু লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কারণ,গত তিনমাস ধরে আমার সেলারি পায়নি।এছাড়া উনি স্কুল না গিয়ে কোথায় গেছেন আমি বলতে পারবো না।

অবশেষে ফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক দেবরাজ ঘোষ মহাশয় জানান, এই বিষয়টি  সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাচ্ছি, যাতে অতি শীঘ্রই ব্যাবস্থা নেওয়া হয় বলে আশ্বাস দেন।

এখন প্রশ্ন একটাই তাহলে কি শিক্ষার আলো থেকে দিন আনা দিন খাওয়া, খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলে মেয়েরা এই ভাবেই বঞ্চিত থাকবে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.