"সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা", সম্পাদকীয়

অভিযোগটি মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। এ অভিযোগে সবাইকে অভিযুক্ত করা যাবে না। তবে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, সাংবাদিকতা যাদের কাছে মহৎ কোনো পেশা নয়। বরং অনৈতিক উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে এই পেশাকে ব্যবহার করছে কেউ কেউ।

শুধু একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারলেই অনেকের ভাগ্য খুলে যায়। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ছোট-বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিচয়পত্র ব্যবহার করে প্রতারণার অনেক অভিযোগই আসে।

সাংবাদিকতা পবিত্র একটি পেশা। সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীকে অনেকটাই ব্রতচারীর ভূমিকা নিতে হয়।

সত্যনিষ্ঠ থেকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনাই একজন সাংবাদিকের কাজ। তাকে অনেক ক্ষেত্রেই নির্মোহ থেকে কাজ করতে হয়। এর বিপরীত চিত্রও যে নেই তা নয়। সমাজে সাংবাদিক নামধারী অনেককেই পাওয়া যাবে, যাদের কাজই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা।সাংবাদিকতার নামে মানুষকে জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে, এমন অনেকেই আছে দেশে। এই মানুষগুলো পেশার ক্ষতি করছে। সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে কলুষিত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। মিডিয়া হাউস খুলে অনৈতিক ব্যবসা করছে—এমনও পাওয়া যাবে। এমন অনেক হাউস থেকে নামমাত্র কাগজ বের হয়।

সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু এসব মিডিয়া হাউসে ওয়েজ বোর্ডের বালাই নেই। কোনো বেতনক্রম নেই। একটি পরিচয়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা ব্যবহার করা এখন অনেকের পেশা। এই পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিকদের সঙ্গে অপরাধ জগতেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে শোনা যায়। পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা সামাজিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এ ধরনের অপসাংবাদিকতার কবলে পড়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সাংবাদিকদের সম্পর্কেও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সৎ সাংবাদিকতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদারি।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যারা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়, মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে, তাদের অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সমাজ থেকে এদের বিতাড়িত করতে না পারলে সাংবাদিকতা পেশা কলুষমুক্ত হবে না। এ জন্য প্রেস কাউন্সিলের পাশাপাশি সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অপসাংবাদিকতার অপসারণ ও সাংবাদিকতায় পেশাদারির বিকাশ না হলে সম্মানজনক অবস্থান নষ্ট হয়ে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বশীলতা ও কঠোর নীতিমালাই সাংবাদিকতা পেশা থেকে অপশক্তিকে দূর করতে পারে।  

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.