আশ্বিন সংক্রান্তিতে পালিত হয় জিহুড় উৎসব

অমরেশ দত্ত, পুরুলিয়া:বাংলার ঘরে ঘরে সাড়ম্বরে পালিত হল "জিহুড় সংক্রান্তি"।
 আর তার মধ্য দিয়েই উৎসবের বার্তা ভেসে উঠল বাংলা তথা বাঙালির দ্বারে। পাশাপাশি একই চিত্র লক্ষ্য করা গেল পুরুলিয়া জেলার মানবাজার শহরে।আজ শুক্রবার মানবাজারে সাড়ম্বরে পালিত হল জিহুড় উৎসব।

পশ্চিম রাঢ়ে আশ্বিন সংক্রান্তিকে বলে জিহুড় দিন। এই দিনে স্থানীয় মানুষেরা আতপ চালের গুঁড়ি জলে গুলে ছিটা দেন ধানের ক্ষেত্রকে, গাছপালাকে, আসবাবপত্রকে, রান্নাঘরের বাসনপত্রকে। আদতে তাঁদের জীবনযাত্রার পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান বন্ধুবান্ধবকে তাঁরা এদিন শৈল্পিকভাবে, মাথা নামিয়ে অনন্ত শ্রদ্ধারভাবে স্মরণ করেন। এর সঙ্গে গোলার ধান-চালকে জাগানো হয় বা প্রস্তুত করা হয়, খেতের আসন্ন ফসলকে আহ্বান ও অর্চনা করা হয়। গান গেয়ে বাড়িতে খামার বাড়ির সঙ্গে নানান স্থানে আলপনা দেওয়া হয়।  

লক্ষ্মীকে আবাহন আর অলক্ষ্মীকে ঝেঁটিয়ে হেনস্থা করে বিদায় দিতে ভাঙা হাঁড়ি, পুরোনো ঝাঁটা, ভাঙা কুলো আর কেঁদ কাঠের লগুড় রাখা হয়। জিহুড় দিনে ২১ রকমের শাক-পাতা রান্না করে খাওয়ার বিধি সর্বজনমাণ্য – আজও এই পশ্চিমি ধারাকে মাথায় নিয়ে দেশজ চিকিত্সা ধারায় অবিশ্বাসের দিনেও গুরুজনেরা জানেন এই শাক-পাতার ঔষধিগুণ।  

জিহুড় দিনে আরও একটি কাজ করা হয়, মা মনসার প্রতি পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয় কোনো মানসার মন্দিরে নয়, নিজের বাড়ির তুলসি মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে। এদিন থেকে আশ্বিন সংক্রান্তি থেকে কার্তিক সংক্রান্তি পর্যন্ত পূর্বপুরুষের স্মরণে আকাশ প্রদীপ দেওয়া হয়।পুরুলিয়ায় বনাঞ্চল সে অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবিকার সংস্থান। সেদিন সমগ্র মানভূম এলাকায় বনদেবীর পুজো করে লাক্ষার চাষ শুরু হয়।

 জিহুড়ের রাতে হালকা বৃষ্টিপাত হয় – এই বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় মুখে নিলে সৌভাগ্যলাভ সুনিশ্চিত। অনেক বিশ্বাসী মানুষ তাই বৃষ্টি পেতে সারারাত মাঠে অপেক্ষা করেন। সমাজের প্রবীণদের আরও বিশ্বাস জিহুড়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী গভীর রাতে তিনবার ডাক দেন – একে বলে জিহুড়ের ডাক ।
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.