প্রয়াত হলেন বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক শ্রদ্ধেয় সুবল দত্ত

অমরেশ দত্ত, পুরুলিয়া: ৭০ দশকের এক প্রচার বিমুখ অন্তর্মুখী কবি। প্রতিটি দশকে নিজস্বতা বজায় রেখে নিজস্ব সাবলীল স্রোত সজীব রাখতে পেরেছিলেন। নাম সুবল দত্ত, জন্ম ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জুলাই। পুরুলিয়া জেলার মানবাজারে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা, চাইবাসাতেই কলেজ জীবন পদার্থবিদ্যায় স্নাতক। স্টেট ব্যাংকে চাকরি সূত্রে ধানবাদে কুড়ি বছর ও বোকারতে ১৬ বছর বর্তমানে জামশেদপুরে বসবাস করতেন।
৮০ দশকে গৌরব ও ৭০-এ যীশুর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তার কাগজ উইঢিপি। ধানবাদে অশ্বমেধের ও কৌনিকের সাথে অভিমুখ ও শহর পত্রিকাতে এবং বোকারো তে ঘুনোপোকা পত্রিকার প্রথম সম্পাদক।বর্তমানে ধানবাদের বর্ণমালার সাথে জড়িত ও বিজ্ঞান বিষয়ে তার প্রবল আকর্ষণ। অংক ও ছবি আঁকা তার নেশা। গদ্যের নিয়ন্ত্রণ ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্যুত না হয়ে প্রান্তিক ঝাড়খন্ড ও মানভূমের অসাধারণ জীবন কাহিনী ও টানটান রোমাঞ্চকর বর্ণনা প্লেগিয়ারিস্ট। গল্প সংকলনে ১৬ টি গল্পের এবং প্রদাহবোধ গল্প সংকলনের ১১ টি গল্পের কোন চরিত্র প্রতিবাদী ও প্রতিশোধ পরায়ণ, আবার কোন গল্পে অসাধারণ জীবন চিত্রপট। বইয়ের পাতায় অস্তিত্বের সংকট এবং তা থেকে মুক্ত হওয়ার অদ্ভুত আকর্ষণীয় সব ঘটনার রচনা লিপি, গল্পের ভাষাতেও এক স্পষ্ট স্বাদ।
কলেজ জীবন থেকেই মূলত তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এবিষয়ে চাইবাসাতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমীর রায় চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ কুমার ঘোষের কাছ থেকে তিনি যথেষ্ট প্রেরণা পেয়েছিলেন।পরবর্তী কালে জামশেদপুরে কমল চক্রবর্তীর সহচর্যে তার সাহিত্যের প্রসার ও প্রচার হয়। ধানবাদে বিটুমিনাস পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি।

লেখার যে এই অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এলো এব্যাপারে তিনি বঙ্গভূমি নিউজের একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, মানবাজারে স্কুল জীবনে তখন দুর্গা লাইব্রেরী নামে একটি লাইব্রেরী ছিল এবং এই লাইব্রেরীর লাইব্রেরিয়ান ছিলেন দুর্গাদাস দত্ত। স্কুল জীবনে ক্লাস সিক্স থেকেই লাইব্রেরীতে পড়ার নেশা ছিল। পরবর্তীকালে বাধা এলে তিনি দুর্গা দাস দত্তের বাড়িতে গিয়ে পড়া চালিয়ে গেছেন এবং তখন থেকেই গল্পের প্লট ইত্যাদি মাথায় আসতো। পরে স্বর্গীয় কবি অমর শংকর দত্তের অনুপ্রেরণায় কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি ইংরেজি পত্রিকার লিফলেট বের করেছিলেন "দ্যা ক্রুসেডার" নামে, খুব ভালো সাড়া পড়েছিল।
 রিটারমেন্টের পর তার যখন স্বপ্ন ছিল যে তিনি খুব সহজেই লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। তখনই তিনি হার্ট ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি, ভেলোরে কেমোথেরাপী চলা কালীন তার লেখা বইটি হল এক এক মুগ্ধতার ছটা। আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্য তথা ত্রিপুরা থেকে আমেরিকা পর্যন্ত তার উপন্যাস ও ছবি আঁকা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন প্রান্তে। সম্প্রতি তার লেখা মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ কোর্সে বহিরবঙ্গ বাংলা সাহিত্যের ধারা দুটি গদ্য সংকলন পড়ানো হয়। মূলত মানভূম ও সিংভূম মানুষের জীবন যাপন প্রণালী ও সংস্কৃতি নিয়ে এগুলি লেখা।
ভারতীয় বিজ্ঞান মঞ্চে যোগদান ও এছাড়াও ব্যাঙ্গালোরে আর্ট অফ লিভিং কোর্স করেন তিনি। কাঠের ভাস্কর্য তিনি করতেন, তার অনেকগুলি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, বিশিষ্ট সাহিত্যকার হিসেবে অনেকগুলি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তার সাহিত্য চর্চা দেশের বিভিন্ন রাজ্য ঝাড়খন্ড, ত্রিপুরা, আসাম থেকে আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জীবনের সেরা কর্মকাণ্ডের জন্য অল ইন্ডিয়া ইউথ কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশনের পক্ষ থেকে তিনি "মানরত্ন" সেরা শিরোপা সম্মাননা পান তিনি।

অমরেশ দত্ত, চিফ এডিটর, বঙ্গভূমি নিউজ
সদস্য, দিল্লি ক্রাইম প্রেস, ID NO: BVC663797, 
RNI NO:DELHIN/2005/15378

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.